অভিজিৎ কে নিয়ে...

আমি নিজের একান্ত মতামত জানাচ্ছি, আজ হয়তো আমাদের মানুষ বলতে খুবই কষ্ট হচ্ছে, মান-হুঁশ সব যদি জলাঞ্জলি দিয়ে উচ্চৈস্বরে বলি আমি হিন্দু গর্বে গর্বিত, আমি মুসলিম গর্বে, আমি জৈন কিংবা বৌদ্ধ, তবে আমাদের মৌলিক যে পরিচয় সেই মানবধর্ম টা কোথাও মুখ লুকিয়ে কাঁদবে। বন্ধু, আজ মাথা উচু করে দুটো কথা বলতেও ভয় পাই, হাত নীচু করে ক’টা কথা লিখতে আরো বেশী ভয়। সত্যি কথা বলতে ভয়ে ভীত হতে হতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, এবার যদি সামনে এগোবার চেষ্টা না করি তবে দেওয়ালে পিষতে পিষতে মারা যাবো তার চাইতে যে ক’দিন বাঁচবো মাথা উঁচু করে সামনের দিকে এগিয়েই বাঁচি। আমরা অনেকে বলে থাকি, প্রতিবাদের ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না, সে যুক্তি এবার ছাড়তে হবে, খুঁজে পেতে হবে সেই ভাষা, যুক্তি তক্কোকে দাঁড় করাতে হবে সঠিক ভাবে। সমূলে উপঢ়ে ফেলা জানিনা কতটা সম্ভবপর হবে তবে সেটার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া একান্ত জরুরী হয়ে পড়েছে। নয়তো এই গরিষ্ঠ গোঁড়ামির গোড়া ওপড়ানো লঘুর পক্ষে সম্ভব নয়। এখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের বজ্রকন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে “...এবং তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো। মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেবো এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” তবে এবার আমাদের ঘুরে দাঁড়াবার একান্ত প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। আজ অভিজিৎ রায়কে হারালাম, সেদিন কাবুলিওয়ালার বাঙালী বউ এর লেখিকা সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও এমনি কারো হাতে প্রাণ দিতে হয়েছিল। কিন্তু কেন? আর কত দিন? এই যে রেষা-রেষি বিদ্বেষ এবারে বন্ধ হওয়া উচিৎ। কবি সুকান্ত অনেক আগে তাঁর কবিতাতে বলে গেছেন, “চলে যাব- তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল এ বিশ্বকে এ-শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি- নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।” আমাদের এই বাংলা (এপার+ওপার) এক হলাহল জগৎ-এর মধ্য দিয়ে চলেছে, তার বেরিয়ে আসা অত্যন্ত জরুরী। একজন শিশু যখন হাঁটি হাঁটি পা পা করে বড় হতে শুরু করে তখন তার সুষ্ঠু বিকাশের জন্য সর্বাগ্রে যা প্রয়োজন তা হল উপযুক্ত পরিবেশ। পরিবেশ যে আজ তার শুধু ভৌগোলিক ভারসাম্য হারিয়েছে তা কিন্তু নয় বরং সেই সাথে সামাাজকও বটে। যে দেশের মাথার উপরে সূর্যের ছটায় সোনা ঝরে পড়ত, মাঠে সোনার ধানে আলো হত...আজ রক্তিম রক্তে...মাঠে আজ ধান না পড়ে থাকে মুণ্ডুহীন লাশ। মাগো বিষিয়ে গেছে এর বায়ু, হিম শীথিল হয়ে পড়েছে আমাদের স্নায়ু। মুক্তি চাই মুক্তি চাই, ধর্ম ধর্ম ধর্ম, বলি ধর্ম দিয়ে হবেটা কি তার চেয়ে কর্ম করা ভালো নয় কি? যে ধর্মে, মা তার সন্তানহারা হয়, স্ত্রী হয় স্বামী হারা, সন্তান হয় অনাথ। নিজেদের সভ্য বলতে দ্বিধা করা উচিৎ, বন্য ঢের ভাল। হয়তো সেটা বললে তাদেরও অপমান করা হবে। পরিশেষে, যত দিন এ সমাজে মানবধর্মের পরিবর্তে থাকবে অন্য কোন ধর্ম ততদিন...জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যখা মৃত আর ধ্বংস স্তুপ -পিষ্ঠে ঠেলে চলে যেতে হবে আমাদের।

Comments

Popular posts from this blog

রং মশাল