...ঢোল প্যান্টালুন বাবু...

ঢোল প্যান্টালুন বাবুর নামটা কানে এলে একটু হাসির উদ্রেক তো হবেই। হ্যাঁ মানুষটি আজবই বটে। ইয়া বড় আধ পাকা গোঁফ, সামনের দুটো দাঁত নেই, কেমন যেন বিড়ি রাখার র‌্যাক মনে হত যখন ফুক ফুক করে বিড়ি টানত। অমায়িক ভালো মানুষটিকে আজ যখন পুলিশে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছিল, বুকের ভেতরটা কেমন যেন দুমড়িয়ে মুচড়িয়ে একশেষ হয়ে যাচ্ছিল । ঢোল-প্যান্টালুন বাবুর এই আজব নামটিই বা কেন? হ্যাঁ মনে প্রশ্ন আসারই কথা। আসলে ওনার পরনে ছিল আদ্যিকালের ঐ ঢোল প্যান্টালুন আর ময়লা একখানা পাঞ্জাবী। রোজ সকালে যখন রসায়ন পড়তে স্যারের কাছে যেতাম তখন নিয়মিত ওনার সাথে দেখা হত চায়ের দোকানে, একগাল হেসে ওনাকে চা-বিস্কুট খাওয়াতাম। না উনি কখনো অত ভদ্রতা দেখাতে না না করেননি। বড় অদ্ভুত মানুষ ছিলেন। খুব মিতভাষী তবে, আমার সাথে বেশ সখ্যতা জমে গেছিল, কাঁচা আর পাকার এ্ই বন্ধুত্ব এক অসামঞ্জস্যও বটে। ক্ষতি কি মশাই? ভালোবাসা আর বন্ধুত্বে বয়স দেখতে নেই। তবে বন্ধুত্বটা ঐ চায়ের দোকানেই, পড়তে যাওয়ার সময় আবার ফেরার সময়। আমার বন্ধুটি জানত আমি কখন ফিরব।

তবে আজ বছর ছয় সেই বন্ধুর সাথে দেখা নেই...আর দেখাও হবে না। সেদিন সকাল থেকেই পৌরসভার ভোট...সবাই ব্যস্ত ভোট দিতে যেতে ব্যস্ত। কিন্তু পাশেই যে পড়ে রয়েছে মানুষটির লাশ কেউ দেখেও দেখতে পাচ্ছেনা। যে মানুষটি তার জীবনভর সারা শহর দাপিয়ে বেড়িয়েছে, রাস্তার এক কোণে হয়তো কুকুরদের সাথে কখনো ব্রীজে রাত কাটিয়েছে। একটি মানুষ চৌকিদারের মত এপ্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ঘুরে বেড়িয়েছে। কই তার দ্বারা তো কখনো ক্ষতি হয়নি কারো বরং উপকার ছাড়া! সেই মানুষটিকে গতরাতে খুন হতে হল, পার্টির দাদা দের হাতে, নিছক গান টেষ্ট নাকি কোন অপকর্মের সাক্ষী হয়ে যাওয়ার জন্য, জানা নেই।

সেদিনের সেই ঢোল প্যান্টালুন বাবুর খুন হয়ে যাওয়াটা নিয়ে কখনো প্রতিবাদের ঝড় ওঠেনি। কোন মিডিয়া প্রচার চালায়নি। ”শহরের বুকে খুন পাগোল।”-একটা ছোট্ট হেডলাইন। কেন সে কি মানুষ নয়? তার কি অধিকার ছিল না, এ পৃথিবীতে বাস করার? পুলিশের ভূমিকা নিয়ে কিচ্ছু বলতেও চাই না আর। আমার বন্ধুটি আজ নেই ঠিকই, আর দাঁড়িয়ে থাকবে না সেই চায়ের দোকানে, তবু সে থাকবে স্মৃতি জুড়ে। স্যালুট ঢোল-প্যান্টালুন বাবু, তুমি কাদম্বরীর মত মরিয়া প্রমাণ করলে, মানুষ কতটা........বলার অপেক্ষা রাখে না আশা করি।

Comments

Popular posts from this blog

রং মশাল